স্বদেশ ডেস্ক:
মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ৩০ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনা নদীর বিভিন্ন অববাহিকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। জাতীয় মাছ ইলিশের ভরা প্রজনন মওসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওই ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ ও পরিবহনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এ ঘোষণা দেন।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় মাছ ইলিশের প্রধান প্রজনন মওসুম হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলাসহ দেশের উপকূলীয় বেশ কয়েকটি উপজেলার নদী অঞ্চলের প্রধান প্রজনন পয়েন্টগুলোতে ওই ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় ও মজুদও নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারি এ আইন বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।
২০০৩ সাল থেকে ইলিশের প্রধান প্রজনন এলাকা হিসেবে নিষিদ্ধÑ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি পয়েন্ট, উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার শাহের আলী-হাইতকান্দি পয়েন্ট, দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া-গন্ডামারা পয়েন্ট, শরীয়তপুর-চাঁদপুর মোহনা, উত্তর-পশ্চিমে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দিন-পশ্চিম সৈয়দ আউলিয়া পয়েন্টের অন্তর্গত প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা। কিন্তু গত বছর থেকে বঙ্গোপসাগরের দেশীয় জলসীমাসহ উপকূলীয় সব মোহনা এবং নদনদীসহ সারা দেশে ইলিশ শিকারে সম্পূর্ণ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।। শুধু শিকারই নয়, এ সময় ইলিশ পরিবহন, আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় এমনকি জমা করে রাখার ওপরও সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম তানবিরুল হক জানান, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ ভাগ। আর বার্ষিক উৎপাদন প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। দেশের সামগ্রিক ইলিশ উৎপাদনের ৬৭ ভাগই সমুদ্র থেকে বাকি ৩৩ ভাগ বিভিন্ন নদনদী থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় এক ভাগ।
তিনি বলেন, ইলিশ প্রজনন মওসুমে বাংলাদেশে ইলিশ ধরতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের সমুদ্র এলাকায় এ সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকে না। তবে আঞ্চলিক এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আলোচনা চলছে।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল কুদ্দুস জানান, আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়ে। এ সময়টাকে ইলিশের ভরা প্রজনন মওসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মেঘনা উপকূলে চলে আসে; যে কারণে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মওসুম ধরে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার দিন, এর আগের চার দিন ও পূর্ণিমার পর ১৭ দিনসহ ২২ দিন পর্যন্ত মেঘনায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওই ২২ দিন যাতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা না হয় সে জন্য অন্যান্য এলাকার মতো মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সরকারি এ আদেশ অমান্য করলে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে অভিযুক্তদের কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। তা ছাড়া এ সময়ে মা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদেরকে ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল দেয়ার কথা রয়েছে।’
মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণবিষয়ক কমলনগর উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হোসেন জানান, সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উপজেলার মতিরহাট থেকে রামগতির চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত তদসংলগ্ন মেঘনা নদী, মাছবাজার ও আড়তগুলোতে ২৪ ঘণ্টা অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নদী উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।